দলীয় টক শো জীবীদের একটা অংশ শাহবাগের আন্দোলন কে ছিনেমা/ সার্কাস বলে।। মজার ব্যাপার পঞ্চাশোর্ধ বড় মাপের একটা ভুঁড়ি আর কাঁধে চশমা বেঁধে যাওয়া এসব লোক- ব্লগ/ ব্লগার/অনলাইন এক্টিভিস্ট কথাটা এই আন্দোলনের আগে শুনেও নি !! সেদিন দেখলাম একজন ঠিক ভাবে ব্লগার বলতেও পারেন না... !!! তরুন দের শক্তির যোগান কথা থেকে এসেছে এ সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল নয়, তাই তারা হুট করে এ জাগরন সহজে হজম করতে পারে নি...
সেদিন দেখলাম একজন বলেই ফেলেছে, "এগুলা প্যাকেজ দেশ প্রেম। হুট করে আসছে, হুট করে চলে যাবে।। "... হাসি আসে এগুলা শুনলে।। মুরুব্বী সমাজ এখনো সংবাদ সম্মেলন করে আন্দলনের ঘোষণা , এরপর মাইকিং, টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করা ছাড়াও যে আন্দোলন হতে পারে এরা এখনো বিশ্বাস করতে শিখে নি।। সমস্যা নাই, কেবল তো শুরু...
একজন সেদিন বললেন, "এই তরুন প্রজন্ম যেদিন বিশ্বজিৎ কে হত্যা করলো সেদিন কই ছিল??"।। এরা তো ফেসবুক ব্লগ চিনেই না, এরা জানবে কিভাবে - বিশ্বজিৎ হত্যার পর ভিডীও দেখে এদের খুনিদের সবার আগে পরিচয় সহ সামনে এনেছে জগন্নাথের কিছু ছেলে।। বিকল্প মিডিয়া তখন মেইন স্ট্রিম মিডিয়া কে বাধ্য করেছিলো সকল খুনির পরিচয় প্রকাশের... এখন কেউ কেউ বলবেন, মেইন স্ট্রিম মিডিয়া কে আবার বাধ্য করলো ক্যামনে?? মেইন স্ট্রিম মিডিয়া ছাড়াও যদি সাধারন মানুষ খুনিদের চিনতে পারে বিকল্প মিডিয়ার মাধ্যমে, তবে মেইন স্ট্রিম মিডিয়া সেই ক্রেডিট নেওয়ার সুযোগ ছাড়বে কেন?? টিপাই মুখ বাঁধ এর প্রতিবাদে বিরোধী দল থেকেও সাধারন মানুষের মাঝে এই অনলাইন এক্টিভিস্টরাই 'সবার আগে' প্রতিবাদের ভাষা পৌঁছে দিতে পেরেছিলো, সচেতন করতে পেরেছিলো মানুষকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে...যেটার দায়িত্ব ছিল বিরোধী দলের। কিন্তু বিরোধী দল অন্তদ্বন্দ্বের কারনে সেই পল্টন এর মোড় থেকে বেরুতেই পারেনি !!!
আন্দোলন চলছে শাহবাগে... এর শেষ কি হবে জানি না।। তবে এরই মধ্যে আমাদের মাঝের কেউ কেউ তাদের ক্ষোভ- হতাশা প্রকাশ করেছেন ।। এতেই এই আন্দোলন যাদের গায়ে জ্বলুনি ধরায়, তারা ভেবে বসেছেন আন্দোলন শেষ কিংবা আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ। কিংবা কেউ কেউ "আন্দোলন গেলো গেলো" রব তুলেছেন !! মূলত কেউ কেউ কিভাবে আন্দোলন কে আরও ইফেক্টিভ করা যায়, কিংবা আন্দোলন কেন ইফেক্টিভ করা হচ্ছে না - সেসব বিষয়ে হতাশা/ ক্ষোভ ঝেড়েছেন আন্দোলনের সাথে উতপ্রত ভাবে সংশ্লিষ্টদের উপর।।
আন্দোলন গতি প্রকৃতি এখনো চেঞ্জ করে নাই।। মূল দাবী "ফাঁসি" থেকে এখনো কেউ সড়ে নাই। যেদিন এটা ছেড়ে দিবে, সেদিন আন্দোলন ব্যার্থ বলা যেতে পারে...
মূলত কোন আন্দোলনই ব্যার্থ হয় না। কথা হলো, প্রতিটা সমাজে, দেশে, জাতীতে কিছু সমস্যা থাকে, ময়লা থাকে, নোংরামি থাকে। এগুলো পরিষ্কার করার জন্যে কোন জাগরন প্রয়োজন হয়, নেতৃত্ব প্রয়োজন হয়, সচেতনতা প্রয়োজন হয়। ৯০ এর দশকে একবার হয়েছে, ২০১৩ তে হলো... এরপর যে সব শুদ্ধ হয়ে যাবে এটা ভাবা মহা আহাম্মকের কাজ হবে।। বরং এর পর এই দেশ, জতি, সমাজ, পতাকা, মাটিকে রক্ষা করতে হলে বারবার জাগরন আনতে হবে, বারবার জাগতে হবে।। সমাজে আবার ক্ষত সৃষ্টি হবে, ক্ষতস্থানে মলম দিয়ে সাড়াতে হবে। আবার ময়লা বসবে, বুড়িগঙ্গায় নিয়ে ফেলতে হবে... এই আন্দোলন দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা আন্দোলনের একটা ধাপ মাত্র।। টিকে থাকার জন্যে , সামনে আগাবার জন্যে এই ধাপ গুলো সাফল্যের সাথে অতিক্রম করে যেতে হয়...।
No comments:
Post a Comment